প্রবাসে বাঙ্গালী

প্রকাসে বাঙ্গালী: শীর্ষ চল্লিশের অমিত চাকমা

Share
Share
অধ্যাপক অমিত চাকমা: ”শিক্ষার মূল লক্ষ্য মন মানসিকতা বড় করা, দৃষ্টিভঙ্গিকে উন্মুক্ত করা।”

‘বৈষম্যে আমি অভ্যস্ত!’- অধ্যাপক অমিত চাকমা’র এই একটি কথাই যেন বলে দেয় অনেক কিছু। সাধারণ বাংলাদেশিরা যেমন বিদেশে এসে লড়াই করেন নিজেদের জায়গা খুঁজে নেয়ার জন্য; অমিত চাকমা তা করেছেন নিজের জন্মভূমিতেই।

আদিবাসীদের প্রতি বাঙালিদের বিরূপাচরণ কোন নতুন ঘটনা নয়। অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য হয়েও সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে ঢাকা কলেজে পড়তে আসেন। বন্ধু বানিয়ে ফেলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সহপাঠীদের। তার পথচলা থেমে থাকেনি সেখানেই।

আলজেরিয়াতে চলে যান রাসায়নিক কৌশলে স্নাতক করতে। সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে পাশ করার পর চলে আসেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে। এখানেই করেন মাস্টার্স এবং পিএইচডি। ক্যালগরি, রেজাইনা এবং ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পর দুটি টার্মে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কানাডার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিও-র দায়িত্ব পালন করেন।

তার সময়েই এই শত বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন করে ব্র্যান্ডিং করা হয়; নতুন নামকরণ হয় – ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়। কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থায় তার অবদান অনেক। বিশেষ করে রেজাইনাতে পড়ানোর সময় কানাডার চল্লিশ বছর বয়সীদের মধ্যে শীর্ষ ৪০-এ তার নাম আসে। অতি সম্প্রতি ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে তিনি গিয়েছেন পৃথিবীর উত্তর থেকে একেবারেই দক্ষিণে।

যারা শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত তারা সবাই জানে এই খাতে যোগ্যতার পাশাপাশি সম্পর্ক ও সুযোগের সমীকরণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক অমিত চাকমা সারাজীবন যেমন শেখার পেছনে সময় দিয়েছেন; তেমনি সময় দিয়েছেন বিভিন্ন দেশের মানুষকে জানতে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে। এখনও এই বয়সে তিনি অনলাইনে স্প্যানিশ ভাষা শিখছেন।

আমাদের এতো মেধা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে এসে আমরা নিজেদের এখনো সেই উচ্চতায় কেন নিতে পারছি না? প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন অনেকটা এইভাবে- আমাদের মূল সমস্যা দুটি – সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাখাত।

”আমরা সাংস্কৃতিক চর্চার চেয়ে দলীয়করণ, নেতা হওয়ার লড়াই বেশি করি। সেই সঙ্গে প্রকৃত শিক্ষার অভাব। শিক্ষার মূল লক্ষ্য মন মানসিকতা বড় করা, দৃষ্টিভঙ্গিকে উন্মুক্ত করা। আমরা যত বেশি জ্ঞান অর্জন করবো, তত বেশি কোন কিছুকে বোঝা আমাদের জন্য সহজ হবে,” অমিত চাকমা বলেন।

”এদিকে বাঙালি জাতির মধ্যে একতা আনা কখনোই সম্ভব না। সবচেয়ে বড় কথা- একটি দেশের নাগরিকত্ব আমরা যখন গ্রহণ করি বা পড়াশোনা করতে আসি অথবা দীর্ঘমেয়াদে থাকতে আসি, তা আমাদের নিজেদের নির্বাচন। সুতরাং সেই দেশের প্রতি সবচেয়ে বেশি অনুগত হওয়া দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

”এই আনুগত্য দ্বিধাবিভক্ত হলে চলবে না। পাশাপাশি সেই দেশের আচার-আচরণ, মূল্যবোধ শেখা এবং পালন করাও জরুরি। আর তা না করতে পারলে সার্বিকভাবে কখনোই সফলতা অর্জন সম্ভব নয়,” তিনি বলেন।

উন্নত বিশ্বে সাধারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন পেশার মেধাবীরাই আসেন। তাই এই কঠিন প্রতিযোগিতার জগতে দূর থেকে কখনোই বোঝা সম্ভব নয়- যারা সফল হচ্ছেন, তারা কতটা চাপ সহ্য করে জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন।

একটি মানুষের বেড়ে উঠা, তারা সফলতার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। নতুন পরিবেশে বেড়ে উঠার জন্য চাই নতুনকে গ্রহণের মন মানসিকতা। রুহুল আবিদ, জাহিদ সবুর এবং অমিত চাকমা, তিনজনই জোর গলায় বললেন, বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশে নানা প্রতিকূলতা, ক্ষুদ্রতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সফল হতে গেলে একটি বিষয়ের কোন বিকল্প নেই – অন্য দশজনের চাইতে কয়েক গুণ বেশি কঠোর পরিশ্রম। আপনি রাজি সেই পরিশ্রমটুকু করতে?

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
খেলাধুলাপ্রবাসে বাঙ্গালীলীড নিউজসর্বশেষ

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার অনুমতি পেলেন হামজা চৌধুরী

অবশেষে ফিফা থেকে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার অনুমতি পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ইংল্যান্ড প্রবাসী...

প্রবাসে বাঙ্গালী

‘বঙ্গবন্ধুকে যেন কাছ থেকে দেখলাম’

নিউ ইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের আইএসপি ভবনের দ্বিতীয় তলায় তখন অন্য...

প্রবাসে বাঙ্গালী

‘বঙ্গবন্ধুকে যেন কাছ থেকে দেখলাম’

নিউ ইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের আইএসপি ভবনের দ্বিতীয় তলায় তখন অন্য...

প্রবাসে বাঙ্গালী

মালয়েশিয়ায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালিত

যথাযোগ্য মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাস, মালয়েশিয়া ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন...