Uncategorized

ই-কমার্স নিয়ে মানুষের মাঝে অভিযোগের পাহাড়। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা- ভোক্তা অধিকার

Share
Share

মাহমুদ হাসান গত ১৫ নভেম্বর অনলাইন শপ এর মাধ্যমে ৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফারে একটি মোবাইল অর্ডার করেন। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য সরবরাহের শর্ত থাকলেও তারা তা দেয়নি।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য না পেয়ে ২৮ নভেম্বর মাহমুদ হাসান ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন। কিন্তু ২রা ডিসেম্বর পণ্য পেয়ে যাওয়ায় তিনি অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে মাহমুদ হাসান বলেন, ২৮ নভেম্বর অভিযোগ করার পর তিনি ৭ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিকার থেকে শুনানির জন্য নোটিশ পান। কিন্তু এর আগেই তিনি পণ্য পাওয়ায় অভিযোগ তুলে নেন। মাহমুদ বলেন, ‘পণ্য তো পেয়েই গেছি। আর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরও তত দিনে কিছু জানায়নি। তাই অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিই। তবে অধিদপ্তরের আরও দ্রুত সাড়া দেওয়া দরকার।’

দেশে ই-কমার্স ব্যবসার প্রসারের কারণে ভোক্তা অধিকারেও এ–সংক্রান্ত অভিযোগ বাড়ছে। তবে অধিদপ্তর বলছে, এ ধরনের অভিযোগের বেশির ভাগই ভোক্তা ও বিক্রেতার মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়, জরিমানা পর্যন্ত যায় না, তাই আমরা যাচাই বাছাই শেষে আমাদের পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।

ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, সঠিক পণ্য না পাওয়া, যথাসময়ে পণ্য না পাওয়া, রিফান্ড না পাওয়া—মূলত এ ধরনের অভিযোগই বেশি আসে। প্রতিষ্ঠিত ই-কমার্স শপগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তাদের পাওয়া গেলেও অসৎ উদ্দেশ্যে শুধু পেজভিত্তিক যেসব ব্যবসা আছে, তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এ জন্য ক্রেতাদের বুঝেশুনে অনলাইন থেকে পণ্য কেনার পরামর্শ দেয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহা বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ক্যাশব্যাকসহ নানা অফার দেয়। ওই সব অফারের সঙ্গে তারা কিছু শর্তও জুড়ে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ভোক্তা ওই শর্ত আর পড়ে দেখে না। অফার দেখেই পণ্য কিনে বসে। এরপর যখন লম্বা সময়ে পণ্য না পায়, তখন তারা অভিযোগ করতে আসে।

ভোক্তার নিজেরও দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে বাবুল কুমার সাহা বলেন, এ ক্ষেত্রে ভোক্তাকে যেকোনো পণ্য বা সেবা নেওয়ার আগে সব ধরনের শর্ত, মেয়াদসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে হবে। তিনি জানান, অনলাইন কেনাকাটা বা সেবার অভিযোগগুলো বেশির ভাগই ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে মীমাংসা হয়ে যায়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করা হয় ২০০৯ সালে। এ আইনের আওতায় ভোক্তা হিসেবে যে কেউ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ জানাতে পারবে। কেউ অভিযোগ করলে এই অধিদপ্তর অভিযোগ তদন্ত করবে এবং শুনানির জন্য দুই পক্ষকে ডাকবে। প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জরিমানা বা কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। শাস্তির মধ্যে আছে এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড। অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা। দণ্ডিত ব্যক্তি আবার একই অপরাধ করলে সর্বোচ্চ পরিমাণের দ্বিগুণ দণ্ডের বিধান আছে। এ ছাড়া জরিমানা হলে অভিযোগকারী ভোক্তাকে মোট জরিমানার ২৫ শতাংশ দেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি বিষয় নিয়ে অভিযোগ করা যায়। এ ছাড়া সব ধরনের পণ্য নিয়ে অভিযোগ করা যায়।

প্রয়োজনে কোনো পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষাও করতে পারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাসায়নিক পরীক্ষার পরিমাণ খুব কম। অধিদপ্তরের নিজস্ব কোনো ল্যাব নেই। কোনো কিছু পরীক্ষা করতে হলে সরকারের অন্য সংস্থার ল্যাব ব্যবহার করতে হয় এবং তার ফি অনেক।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আইন করা হলেও ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে অভিযোগ আসা শুরু করে। ভোক্তা অধিদপ্তরে এ পর্যন্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ৩৮ হাজার ৮৭১টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৭৩টি। অনিষ্পন্ন অভিযোগ ২ হাজার ৮৯৮টি। অভিযোগ ও অভিযানের মাধ্যমে মোট জরিমানা আদায় হয়েছে ৭০ কোটি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ টাকা। অভিযোগকারীকে দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৫৫২ টাকা এবং সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে ৬৮ কোটি ৮৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৮ টাকা। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ হাজার ১৯৫টি। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৮১টি গণশুনানি করেছে ভোক্তা অধিকার।

অভিযোগ বাড়ার বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। মানুষ অভিযোগ করে সমাধান পাচ্ছে।

শাকিলা হক নামের এক চাকরিজীবী জানিয়েছেন, পরিবার ও বন্ধুদের একটি দল নিয়ে বছর দু-এক আগে গাজীপুরে একটি রিসোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু যে পরিমাণে টাকা তাঁরা দিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী সেবা পাননি। এ নিয়ে ভোক্তা অধিকারে তিনি অভিযোগ করেন। অধিদপ্তর থেকে শুনানি হয় এবং অধিদপ্তর তদন্তের জন্য ওই রিসোর্টেও যায়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অধিদপ্তর ওই রিসোর্টকে জরিমানা করে।

শাকিলা হক বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের কাজে আমরা সন্তুষ্ট। তবে পুরো প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লাগে এবং অভিযোগকারীকে লেগে থাকতে হয়। বিষয়গুলোর সমাধান আরও দ্রুত হলে ভালো হয়।’
বিজ্ঞাপন

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, অভিযোগকারীকে ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে হয়। অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র বা সেবা নেওয়ার রসিদ থাকতে হবে। মোবাইল ফোনে এসএমএস করে, ফ্যাক্স বা ই-মেইলে অভিযোগ করা যায়। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে থাকা অভিযোগ ফরম পূরণ করেও অভিযোগ করা যায়। অধিদপ্তর জানায়, ই-মেইলে ও ওয়েবসাইটের ফরম পূরণ করে অভিযোগ বেশি জমা পড়ে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে যেতে ক্লিক করুন

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
Uncategorizedআইন-আদালতআন্তর্জাতিকপ্রচ্ছদরাজনীতিসর্বশেষ

ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে, আশা টবি ক্যাডম্যানের

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক...

Uncategorized

‘আমি মনে করি, আমরা সবাই সৎ’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমরা সবাই সৎ। অসৎ...

Uncategorized

আন্দোলনের ভয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায় সরকার: ভিপি নুর

আন্দোলনের ভয়েই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়...

Uncategorized

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন...