অর্থ ও বাণিজ্য

অর্থনীতিতে এক ‘ভি’-এর আশায় আরেক ‘ভি’

Share
Share

করোনা প্রতিষেধকের মধ্যেই অর্থনীতির জিয়নকাঠি লুকিয়ে আছে বলে মনে করেন ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের (আরবিআই) শীর্ষ কর্তারা। বৃহস্পতিবার দেশটির শীর্ষ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অর্থনীতি এখন প্রবৃদ্ধির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। কয়েক দিনের মধ্যে তা ইংরেজি ‘ভি’ বর্ণের মতো ঘুরে দাঁড়াবে। আর তার পেছনে কাজ করবে আরেক ‘ভি’। অর্থাৎ, প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন।

তবে একই দিনে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক। তাদের বক্তব্য, ইউরোপের কয়েকটি দেশে মহামারি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ফলে ২০২০ সালের পরে এ বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকেও সংকুচিত হতে পারে ইউরো অঞ্চলের জিডিপি। ইকোনমিক টাইমস সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম দুটি ত্রৈমাসিকে যথাক্রমে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছিল ভারতের অর্থনীতি। রিজার্ভ ব্যাংক আগেই জানিয়েছে, সারা বছরে সংকোচনের হার দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। বৃহস্পতিবার আরবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর মহামারির অভিঘাতে মানুষ অনেক কিছু শিখেছে। সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। কার্যত পৌঁছেই গিয়েছে প্রবৃদ্ধির দোরগোড়ায়। আর তাকে শক্তি জোগাচ্ছে করোনা প্রতিষেধক। বলা হয়েছে, অতীতে দেশব্যাপী পোলিও এবং হামের টিকাদানের অভিজ্ঞতা আছে ভারতের। তৈরি হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিষেধক উৎপাদনক্ষমতা। এবার প্রতিষেধক প্রয়োগ সফল হলে অর্থনীতির সামনে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। একই সঙ্গে লকডাউন শিথিলের পর থেকে চাহিদা বৃদ্ধি, ভালো কৃষি উৎপাদন, ব্যাংকের অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) কমা ও বকেয়া ঋণ উদ্ধারে গতি বৃদ্ধি তো আছেই। তবে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, উৎপাদন ও কর্মসংস্থানকে আগের জায়গায় নিয়ে যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, উৎপাদন আগের মতোই ধাক্কা খেলে সরবরাহব্যবস্থা মসৃণ কীভাবে হবে এবং সে ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে কি না, তা নিয়েপ্রশ্ন আছে।
টিকাতেই ভরসা: বিশ্বব্যাংক

এদিকে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০ সালের ভগ্নস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ৪ শতাংশ সম্প্রসারিত হতে পারে। তারা ধরে নিয়েছে, ২০২১ সালের প্রথম ভাগে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাপকভাবে চালু হলে অর্থনীতির পথ মসৃণ হতে শুরু করবে। চলতি মাসে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বিশ্বব্যাংক এ কথা বলেছে।

বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে লাখ লাখ, এখন যে অর্থনীতির সম্প্রসারণ হচ্ছে, বলা যায়, তা এই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়েই মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, মহামারির প্রভাবে বিনিয়োগে যে খরা দেখা যাচ্ছে, তা মোকাবিলায় ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন করতে হবে। আর সে জন্য দরকার বড় ধরনের প্রচেষ্টা। এ ছাড়া শ্রম ও পণ্যবাজারের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শাসনব্যবস্থারও উন্নতি ঘটাতে হবে।

আশার কথা হলো, বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২০ সালে অর্থনৈতিক সংকোচন যতটা হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, ততটা হয়নি। মূলত উন্নত অর্থনীতিগুলো তৃতীয় প্রান্তিক থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে এমনটা হয়েছে।

তবে অনিশ্চয়তা এখনো পুরোপুরি কাটেনি। টিকাদান বিলম্বিত হলে ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে যেতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
অর্থ ও বাণিজ্যসর্বশেষ

বেক্সিমকোর ১৬ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নেই, ব্যাংক ঋণ ৪০ হাজার কোটি টাকা

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৩২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে...

অর্থ ও বাণিজ্যসর্বশেষ

পণ্য খালাসে বিলম্ব এড়াতে সাময়িক ছাড়পত্র দেবে বিএসটিআই

আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল খালাসে বিলম্ব এড়াতে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত...

অর্থ ও বাণিজ্যসর্বশেষ

ফোনে কথা বলা, রেস্তোরাঁ, পোশাকে ভ্যাট কমানোর আদেশ জারি

ভ্যাট বাড়ানোর দুই সপ্তাহের মধ্যে কিছু পণ্য–সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কমাল...

অর্থ ও বাণিজ্যকর্পোরেটজাতীয়ঢাকাসর্বশেষ

আশুলিয়ায় ২২ কারখানায় সাধারণ ছুটি

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের অন্তত ২২টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা...