Uncategorized

অজগরের খাবার জীবন্ত খরগোশটির জন্য ভালোবাসা

Share
Share

প্রতিবাদ, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছোট্ট খরগোশ ‘সূচনা’র জন্য ভালোবাসা জানিয়েছেন একদল খরগোশপ্রেমী। আর এ আন্দোলনে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এই সূচনাকে অজগর সাপের খাদ্য হিসেবে খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনের ফলে সূচনা এখনো বেঁচে আছে, ভালো আছে।

গত শনিবার চিড়িয়াখানায় গিয়ে অজগরের খাঁচায় খরগোশ দেখা যায়নি।

জীবন্ত প্রাণীকে অন্য প্রাণীর খাঁচায় খাবার হিসেবে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। গত ২৯ জানুয়ারি ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট দিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের তরুণ তানজীল আহমেদ। তিনি ছবিটি পোস্ট করেছিলেন বাংলাদেশ র‌্যাবিট গ্রুপ নামের একটি গ্রুপে।

গতকাল রোববার টেলিফোনে তানজীল আহমেদ বলেন, তাঁর নিজের পাঁচটি খরগোশ আছে। তাই খরগোশের প্রতি তাঁর বাড়তি দরদ আছে। তাঁর এক ছোট ভাই চিড়িয়াখানা বেড়াতে গিয়েছিল। ফেরার পর সেখানকার বিভিন্ন ছবি দেখাচ্ছিল। হঠাৎই একটি ছবিতে চোখ আটকে যায়। ছবিটি ছিল অজগর সাপের খাঁচার গ্রিল ধরে অসহায় এক খরগোশের ছবি। প্রাণভয় তার চোখেমুখে। ছবিটি ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলে তা দ্রুত সাড়া ফেলে।

বাংলাদেশ র‌্যাবিট গ্রুপের অ্যাডমিন নাজ আফরিন খান বললেন, ‘গ্রুপে ছবিটি দেখে আমরা খবর নিয়ে জানতে পারি খরগোশটিকে অজগরের খাদ্য হিসেবে খাঁচায় রাখা হয়েছিল। অজগর যত দিন খরগোশটিকে না খাবে, তত দিন আর ওই খরগোশকে কোনো খাবারও দেওয়া হয় না। আর খরগোশটি যে কতটা ভীত, তা তো ছবিতেই স্পষ্ট ছিল। আমিই ওর নাম দিয়েছি সূচনা।’

বিজ্ঞাপন

নাজ আফরিন খান জানালেন, ১ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানার সামনে অবস্থান করেন গ্রুপের সদস্যরা। চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কিউরেটরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে সূচনাকে তাঁদের কাছে দিয়ে দিতে বলেছিলেন, তা কর্তৃপক্ষ দেয়নি। তবে সূচনাকে এখন অজগরের খাঁচা থেকে বের করে ফেলা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে চিড়িয়াখানায় লাঠির আগায় মাংসের টুকরা রেখে তা নাড়িয়ে নাড়িয়ে সাপকে খাওয়ানো হয় বলে উল্লেখ করে এ খরগোশপ্রেমী বললেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অজগর, বাঘ, সিংহসহ বিভিন্ন প্রাণীর অলসতা কমানো এবং প্রজনন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জীবন্ত খাবার দিচ্ছে বলে যে যুক্তি দিচ্ছে, তারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে বাংলাদেশ র‌্যাবিট গ্রুপ কাল মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানালেন নাজ আফরিন খান।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারলেও সমালোচনার মুখে আপাতত খরগোশটিকে অজগরের খাবার হিসেবে আর খাঁচায় পাঠায়নি। বর্তমানে সপ্তাহে এক দিন জীবন্ত মুরগির বাচ্চা খাবার হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর খরগোশকে খাবার হিসেবে দিলেও রোববার (সাপ্তাহিক ছুটি) বেলা তিনটায় দেওয়ার পর অজগর তা না খেলে সোমবার সকাল আটটার মধ্যে খাঁচা থেকে বের করে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অজগর কখন খাবে সে অপেক্ষায় ফেলে রাখা হবে না।

জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রাণী চিকিৎসক নাজমুল হুদা বলেন, চিড়িয়াখানায় জীবন্ত প্রাণীকে অন্য কোনো প্রাণীর খাবার হিসেবে দেওয়াই যাবে না বৈশ্বিকভাবে ‘নাক বরাবর এমন কোনো লাইন’ টানা নেই। বাংলাদেশের প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯–এ জীবন্ত প্রাণী খাদ্য হিসেবে দেওয়া যাবে না, এই রকম কোনো ধারা বা উপধারা নেই। বরং চিড়িয়াখানা পরিচালনার স্বার্থে ক্ষেত্রবিশেষ নিষ্ঠুরতাকে শিথিল করা হয়েছে।

চিকিৎসক নাজমুল হুদা ভারত, চীন, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন আইন ও নীতিতেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই বলে জানালেন। তিনি তাঁর ফেসবুকে এ–বিষয়ক এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনে জবাই বা অন্য প্রাণীর খাবার হিসেবে দেওয়ার আগে ওই প্রাণীকে অজ্ঞান করার কথা বলেছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যে খাবার হিসেবে জীবন্ত প্রাণী সরবরাহ করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতেও এ বিষয়টিতে নিষেধাজ্ঞা নয়, নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কুইন্সল্যান্ডের আইনে (অ্যানিমেল কেয়ার অ্যান্ড প্রটেকশন অ্যাক্ট) সরাসরি জীবন্ত খাদ্য দিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ব্রিটেনের গবেষক জন ই কপার তাঁর গবেষণার সুপারিশে সম্ভব হলে মৃত প্রাণীর মাংস খাবার হিসেবে সরবরাহের কথা বলেছেন। জীবন্ত প্রাণী দিতে হলে ওই জীবন্ত প্রাণীর কষ্ট লাঘবের কথা উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশের চিড়িয়াখানায় খরগোশ সূচনাকে কোনো খাবার দেওয়া হয়নি, এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক নাজমুল হুদা বললেন, বিষয়টি জানার পর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এ চিকিৎসকের মতে, চিড়িয়াখানায় একেক অজগরের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। চিড়িয়াখানায় আনার পর থেকে এরা জীবন্ত খরগোশ ও মুরগির বাচ্চা খেয়েই অভ্যস্ত। অন্য মৃত প্রাণীর মাংস দিলেও খাবে না। তবে অজগরের নতুন প্রজন্ম জন্ম নিলে তাদের মৃত প্রাণীর মাংস খাইয়ে অভ্যস্ত করানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। চলমান প্রজন্মের বেলায় এটি করতে গেলে ক্ষতি হবে।

বিজ্ঞাপন

তবে অজগর শুধু জীবন্ত প্রাণীই খায়, অন্য খাবার খাবেই না, এ যুক্তি নাকচ করে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বললেন, ব্যাঙকে মৃত প্রাণীর খাবার দিলে সে মরে যাবে তারপরও ওই খাবার খাবে না। তার জীবন্ত প্রাণীই লাগবে। তবে সাপ বা অজগর এমন শ্রেণির না। ক্ষুধা লাগলে একসময় না একসময় খাবে। শুধু নতুন খাবারে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত করাতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই চিড়িয়াখানায় জীবন্ত প্রাণীকে অন্য প্রাণীর খাবার হিসেবে দেওয়ার নজির কমে আসছে বলেও মন্তব্য করলেন তিনি।

চার মাস আগে দায়িত্ব পাওয়া জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর চিকিৎসক মো. আবদুল লতিফ বলেন, ফেসবুকে সমালোচনার পর খরগোশটিকে খাঁচা থেকে সরিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। খাবার দেওয়া হচ্ছে। খরগোশটি ভালো আছে। খাবার হিসেবে খরগোশ বা জীবন্ত খাবারের বিকল্প কী হতে পারে, তা নিয়ে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

আবদুল লতিফ জানালেন, ১৯৮৪ সাল থেকেই অজগরের খাবার হিসেবে টেন্ডারের মাধ্যমে জীবন্ত খরগোশ বা মুরগির বাচ্চা দেওয়া হচ্ছে। তবে বর্তমানে জীবন্ত প্রাণীকে খাবার হিসেবে দেওয়ার বিষয়ে যে সমালোচনাটি হচ্ছে, তারও যৌক্তিকতা আছে। অন্যদিকে চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণীর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, তা–ও ভাবতে হয়। সব দিক বিবেচনা করেই কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করছে।

বাংলাদেশ র‌্যাবিট গ্রুপের সদস্যরা খরগোশটিকে তাঁদের কাছে দিয়ে দেওয়ার যে দাবি তুলেছেন, তা দেওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করে আবদুল লতিফ বললেন, ‘এটি তো আর আমার ব্যক্তিগত কোনো সম্পত্তি না যে কেউ চাইলেই দিয়ে দিতে পারব। আর অজগরের খাবারের তালিকায় কাগজে-কলমে এখনো জীবন্ত খরগোশই আছে।’

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
Uncategorizedআইন-আদালতআন্তর্জাতিকপ্রচ্ছদরাজনীতিসর্বশেষ

ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে, আশা টবি ক্যাডম্যানের

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শক...

Uncategorized

‘আমি মনে করি, আমরা সবাই সৎ’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমরা সবাই সৎ। অসৎ...

Uncategorized

আন্দোলনের ভয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায় সরকার: ভিপি নুর

আন্দোলনের ভয়েই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়...

Uncategorized

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন...