ইসলাম

হৃদয়ের পরিশুদ্ধি আমলের মূল্য বাড়ায়

Share
Share

পরকালীন সাফল্যই মুমিনের আসল সাফল্য। আর এ সাফল্যের ক্ষেত্রে কৃষক, মজুর, রাজা, প্রজা, নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সব মানুষের সাফল্যের ভিত্তি জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাওয়া এবং জান্নাত লাভ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়েছে সেই সফল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

পৃথিবীর নিয়ম হলো যদি কাউকে বলা হয় অমুক ব্যবসায়ী সফল, অমুক কৃষক সফল, অমুক ব্যক্তি আপন পেশায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন, তবে সে তার কাছে ছুটে যায়। জিজ্ঞাসা করে, আপনি কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে সাফল্য পেয়েছেন। আর মুমিন যেহেতু বিশ্বাস করে পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভই তার সাফল্য, তাই সে পরকালীন কল্যাণের পথ খুঁজে বেড়ায়।

মুমিন জীবনের সাফল্য

আল্লাহ মুমিনের সামনে পরকালীন সাফল্য লাভের সব রহস্য ও পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, সে মহা সাফল্য লাভ করবে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৭৭)

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যই মুমিন জীবনে সাফল্য বয়ে আনে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের হাজারো দিক আছে। আনুগত্যের এসব দিকের মধ্যে একটি দিক এত গুরুত্বপূর্ণ যে তা যদি অর্জিত না হয়, তবে অন্যসব আনুগত্য অর্জিত হওয়ার পরও সাফল্য আসবে না। আর যদি সেই আনুগত্যের দিক অর্জিত হয়, তবে অন্যান্য আনুগত্যের দ্বারা তার মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি জিনিসেরই একটি মূল ভিত্তি থাকে। যেমন হজের অনেক বিধি-বিধান আছে; কিন্তু হাদিসে এসেছে ‘আরাফায় অবস্থানই হজ’। সুতরাং কেউ আরাফায় অবস্থান না করলে তার হজ সম্পন্ন হবে না। অনুরূপ তাওবার ব্যাপারে এসেছে, ‘অনুতপ্ত হওয়াই তাওবা’। তাই অপরাধ করার পর হৃদয়ে অনুতাপ না এলে তাওবা সম্পন্ন হবে না।

পরিশুদ্ধ হৃদয় সাফল্যের চাবিকাঠি

আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের মূল দিক হলো আত্মার পরিশুদ্ধি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন কোনো সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি উপকারে আসবে না, তবে যে আল্লাহর কাছে পরিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে আসবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮)

জান্নাতিদের হৃদয় হবে পরিশুদ্ধ

আর ‘কলবে সালিম’ বা পরিশুদ্ধ হৃদয় হলো যা পরিশুদ্ধ হয় সব দোষ-ত্রুটি ও ব্যাধি থেকে। যে হৃদয়কে তুলনা করা যায় জান্নাতিদের হৃদয়ের সঙ্গে। কেননা জান্নাতিরা হৃদয়ের সব ত্রুটি, ব্যাধি ও সংকীর্ণতামুক্ত হবে। তাদের হৃদয় হবে পরিশুদ্ধ ও সুস্থ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৭)

বিদ্বেষ আত্মার পরিশুদ্ধির পথে অন্তরায়। অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর হলে তাতে ‘সালামাত’ (সুস্থতা ও পরিশুদ্ধি) তৈরি হয়। পবিত্র কোরআনে বিদ্বেষমুক্ত হৃদয়ের জন্য প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের এবং আমাদের ভাইদের ক্ষমা করুন, যারা ঈমানের সঙ্গে গত হয়েছে। আর মুমিনের প্রতি আমাদের হৃদয়ে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১০)

বিদ্বেষ থাকবে জাহান্নামিদের হৃদয়ে

বিপরীতে জাহান্নামিদের হৃদয় হবে বিদ্বেষপূর্ণ। তারা তাদের পূর্বসূরিদের ব্যাপারে বিদ্বেষবশত অভিশাপ করবে—‘নিশ্চয়ই আমরা আমাদের সর্দার ও বয়োজ্যষ্ঠদের অনুসরণ করতাম, তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং অভিশাপ করুন।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৬৭)

হৃদয় পরিশুদ্ধ করার উপায়

বিদ্বেষ ও অনুরূপ আত্মিক ব্যাধি ও ত্রুটি থেকে আত্মরক্ষার উপায় হলো ইখলাস সৃষ্টি করা। তা হলো প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। প্রতিটি কাজে আল্লাহর পুরস্কার লাভ ও শাস্তি পাওয়ার ভয় করা। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা ও আল্লাহভীতি মানবহৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে। আর ইখলাসপূর্ণ আমল বিনিময়যোগ্য হয় যখন তাতে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রয়েছে রাসুলের জীবনে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহ ও পরকালীন কল্যাণ প্রত্যাশা করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
ইসলামজাতীয়ঢাকাপ্রচ্ছদসর্বশেষ

ইজতেমা ময়দান ছাড়ছেন মুসল্লিরা

গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকা, রাজধানীর কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা...

ইসলাম

দ. আফ্রিকায় অপরাধীদের জীবন বদলে দিতে আলেমদের প্রচেষ্টা

স্থানীয় আলেমদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকার অপরাধ-ভূমি কেপ টাউনের বেশ কিছু এলাকার...

ইসলাম

প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরলে কি নামাজ হবে?

প্রশ্ন: প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরা যাবে? যদি আমি তা পরিধান করে নামাজ...

ইসলাম

কোন কসম জায়েজ কোন কসম জায়েজ নয়

প্রশ্ন: আল্লাহর নাম ব্যতীত শুধু কসম শব্দ দ্বারা কসম করলে কি কসম সংঘটিত...

ইসলাম

হৃদয়ের পরিশুদ্ধি আমলের মূল্য বাড়ায়

Share
Share

পরকালীন সাফল্যই মুমিনের আসল সাফল্য। আর এ সাফল্যের ক্ষেত্রে কৃষক, মজুর, রাজা, প্রজা, নেতা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সব মানুষের সাফল্যের ভিত্তি জাহান্নাম থেকে বেঁচে যাওয়া এবং জান্নাত লাভ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়েছে সেই সফল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

পৃথিবীর নিয়ম হলো যদি কাউকে বলা হয় অমুক ব্যবসায়ী সফল, অমুক কৃষক সফল, অমুক ব্যক্তি আপন পেশায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন, তবে সে তার কাছে ছুটে যায়। জিজ্ঞাসা করে, আপনি কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে সাফল্য পেয়েছেন। আর মুমিন যেহেতু বিশ্বাস করে পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভই তার সাফল্য, তাই সে পরকালীন কল্যাণের পথ খুঁজে বেড়ায়।

মুমিন জীবনের সাফল্য

আল্লাহ মুমিনের সামনে পরকালীন সাফল্য লাভের সব রহস্য ও পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে, সে মহা সাফল্য লাভ করবে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৭৭)

কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যই মুমিন জীবনে সাফল্য বয়ে আনে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের হাজারো দিক আছে। আনুগত্যের এসব দিকের মধ্যে একটি দিক এত গুরুত্বপূর্ণ যে তা যদি অর্জিত না হয়, তবে অন্যসব আনুগত্য অর্জিত হওয়ার পরও সাফল্য আসবে না। আর যদি সেই আনুগত্যের দিক অর্জিত হয়, তবে অন্যান্য আনুগত্যের দ্বারা তার মর্যাদাই বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি জিনিসেরই একটি মূল ভিত্তি থাকে। যেমন হজের অনেক বিধি-বিধান আছে; কিন্তু হাদিসে এসেছে ‘আরাফায় অবস্থানই হজ’। সুতরাং কেউ আরাফায় অবস্থান না করলে তার হজ সম্পন্ন হবে না। অনুরূপ তাওবার ব্যাপারে এসেছে, ‘অনুতপ্ত হওয়াই তাওবা’। তাই অপরাধ করার পর হৃদয়ে অনুতাপ না এলে তাওবা সম্পন্ন হবে না।

পরিশুদ্ধ হৃদয় সাফল্যের চাবিকাঠি

আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যের মূল দিক হলো আত্মার পরিশুদ্ধি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন কোনো সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি উপকারে আসবে না, তবে যে আল্লাহর কাছে পরিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে আসবে।’ (সুরা শুআরা, আয়াত : ৮৮)

জান্নাতিদের হৃদয় হবে পরিশুদ্ধ

আর ‘কলবে সালিম’ বা পরিশুদ্ধ হৃদয় হলো যা পরিশুদ্ধ হয় সব দোষ-ত্রুটি ও ব্যাধি থেকে। যে হৃদয়কে তুলনা করা যায় জান্নাতিদের হৃদয়ের সঙ্গে। কেননা জান্নাতিরা হৃদয়ের সব ত্রুটি, ব্যাধি ও সংকীর্ণতামুক্ত হবে। তাদের হৃদয় হবে পরিশুদ্ধ ও সুস্থ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর করব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৪৭)

বিদ্বেষ আত্মার পরিশুদ্ধির পথে অন্তরায়। অন্তর থেকে বিদ্বেষ দূর হলে তাতে ‘সালামাত’ (সুস্থতা ও পরিশুদ্ধি) তৈরি হয়। পবিত্র কোরআনে বিদ্বেষমুক্ত হৃদয়ের জন্য প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আমাদের এবং আমাদের ভাইদের ক্ষমা করুন, যারা ঈমানের সঙ্গে গত হয়েছে। আর মুমিনের প্রতি আমাদের হৃদয়ে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১০)

বিদ্বেষ থাকবে জাহান্নামিদের হৃদয়ে

বিপরীতে জাহান্নামিদের হৃদয় হবে বিদ্বেষপূর্ণ। তারা তাদের পূর্বসূরিদের ব্যাপারে বিদ্বেষবশত অভিশাপ করবে—‘নিশ্চয়ই আমরা আমাদের সর্দার ও বয়োজ্যষ্ঠদের অনুসরণ করতাম, তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং অভিশাপ করুন।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৬৭)

হৃদয় পরিশুদ্ধ করার উপায়

বিদ্বেষ ও অনুরূপ আত্মিক ব্যাধি ও ত্রুটি থেকে আত্মরক্ষার উপায় হলো ইখলাস সৃষ্টি করা। তা হলো প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। প্রতিটি কাজে আল্লাহর পুরস্কার লাভ ও শাস্তি পাওয়ার ভয় করা। মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা ও আল্লাহভীতি মানবহৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে। আর ইখলাসপূর্ণ আমল বিনিময়যোগ্য হয় যখন তাতে মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রয়েছে রাসুলের জীবনে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহ ও পরকালীন কল্যাণ প্রত্যাশা করে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২১)

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
ইসলামজাতীয়ঢাকাপ্রচ্ছদসর্বশেষ

ইজতেমা ময়দান ছাড়ছেন মুসল্লিরা

গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকা, রাজধানীর কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা...

ইসলাম

দ. আফ্রিকায় অপরাধীদের জীবন বদলে দিতে আলেমদের প্রচেষ্টা

স্থানীয় আলেমদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকার অপরাধ-ভূমি কেপ টাউনের বেশ কিছু এলাকার...

ইসলাম

প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরলে কি নামাজ হবে?

প্রশ্ন: প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরা যাবে? যদি আমি তা পরিধান করে নামাজ...

ইসলাম

কোন কসম জায়েজ কোন কসম জায়েজ নয়

প্রশ্ন: আল্লাহর নাম ব্যতীত শুধু কসম শব্দ দ্বারা কসম করলে কি কসম সংঘটিত...