খেলাধুলালীড নিউজ

কোথায় আছেন, কী করছেন ৮৩-র বিশ্বকাপ জয়ীরা

Share
Share

১৯৮৩ সালের ২৫ জুন লন্ডনের লর্ডসে ইতিহাস গড়ে ভারত। আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রথমবারের মতো ভারতীয় দলের অধিনায়ক কপিল দেব প্রুডেন্সিয়াল ট্রফি উত্তোলন করেন। খেলাটি লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাটিং ও বোলিংয়ে অসামান্য দক্ষতা প্রদর্শন করায় অল-রাউন্ডার মহিন্দর অমরনাথ ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

ওই বছর ভারতীয় ক্রিকেট দলকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়নি। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে তারা বিশ্বকাপের ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় এবং দুবারের বিশ্বকাপ জয়ী ও এর আগের বারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে অংশ নেয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণের মুখে পড়ে দলটি মাত্র ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। এর পরেও ভারতীয় দলের কাছে ৪৩ রানের স্বল্প ব্যবধানে নাটকীয়ভাবে পরাজিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বজয় করেন কপিল দেব, মহিন্দর অমরনাথ, সুনীল গাভাস্কার, দিলীপ ভেংসরকাররা। কোথায় আছেন, কী করছেন এখন তারা?

কপিল দেব

বিশ্বকাপ জয়ের সময় কপিল দেবের বয়স ছিল ২৪ বছর। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও তিনি স্বচ্ছন্দ। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে তার ব্যাটিং দলকে এগোতে সাহায্য করে। ওই ম্যাচে ভারতের হারের অপেক্ষায় ছিল বিশ্ব। সেই ম্যাচে তিনি ১৭৫ রান করে দলকে জিতিয়ে আনেন। এটায় তার সব থেকে বেশি রান।

১৯৯৪ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। এরপর দীর্ঘদিন তিনি জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। এছাড়াও কমেন্ট্রি করেছেন। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ নামে একটা টুর্নামেন্টের সূচনা করেন।

২০১৯ সালে তাকে ইন্ডিয়ান টেরিটোরিয়াল আর্মির সাম্মানিক লেফট্যানেন্ট কর্নেল পদ দেওয়া হয়। ক্রিকেটের বাইরে তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার রেস্তরাঁ ও লাইটিং কোম্পানি আছে।

 

সুনীল গাভাস্কার

বিশ্বকাপে সব থেকে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছিলেন গাভাস্কার। কিন্তু সেই সময় তার ফর্ম আশানুরূপ ছিল না। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাকে প্রথম একাদশের বাইরে রাখা হয়।

অবসরের পর বিভিন্ন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন গাভাস্কার। কমেন্ট্রি করার পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও। এছাড়াও BCCI প্রেসিডেন্ট, ICC ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন।

রবি শাস্ত্রী

অলরাউন্ডার রবি শাস্ত্রী দলে জায়গা পান সুনীল গাভাস্কারের বাদ পড়া দুই ম্যাচে। বর্তমানে ভারতের জাতীয় দলের কোচ শাস্ত্রী। তবে এর আগে তিনি কমেন্ট্রিতে ছাপ ফেলেছেন।

মহিন্দর অমরনাথ

১৯৮৩-র বিশ্বকাপের স্টার ছিলেন অমরনাথ। ফাইনালে সেরা প্লেয়ার নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হন। ফাইনালে তিনি করেন ২৬ রান। নেন তিনটি উইকেট।

জাতীয় ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন নির্বাচক ছিলেন মহিন্দর অমরনাথ। এছাড়া বাংলাদেশ টিমের কোচও ছিলেন। ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তাকে কিছু ম্যাচে দেখা গেছে।

সন্দীপ প্যাটেল

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার ৫১ রান ভারতকে ফাইনালে উঠতে সাহায্য করে। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই প্যাটেলের ব্যাট দলকে ভরসা জুগিয়েছে। অবসরের পর তিনি কেনিয়ার জাতীয় দলে কোচিং করান। তার প্রশিক্ষণেই কেনিয়া ২০০৩ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছায়। এছাড়াও তিনি জাতীয় দলের প্রাক্তন নির্বাচকও ছিলেন।

দিলীপ ভেংসরকার

বিশ্বকাপের প্রথমদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চোট পেয়ে ছিটকে যান ভেংসরকার। সেমিফাইনালে তিনি প্রত্যাবর্তন করেন। অবসরের পর তিনি বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ তেলাঙ্গানার পরামর্শদাতা। এর আগে তিনি নির্বাচক মণ্ডলীর চেয়ারম্যানও ছিলেন। এছাড়াও তার একটি ক্রিকেট একাডেমি আছে।

কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্ত

বিশ্বকাপের ওপেনার ছিলেন শ্রীকান্ত। ফাইনালে তিনি ৩৮ রান করেন। যা সেই ম্যাচে সর্বোচ্চ ছিল। ক্রিকেট দল থেকে অবসরের পর ধারাভাষ্য দেওয়ার পাশাপাশি তিনি জাতীয় দলের নির্বাচক ছিলেন। এছাড়া IPL-এ চেন্নাই সুপার কিংস ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। ২০১৯ সালে তিনি ক্রিকেট বিশ্বকাপের অ্যাম্বাসেডর হন।

রজার বিনি

১৯৮৩ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (১৮) বিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি সেরা নির্বাচিত হন। তিনি করেন ২১ রান ও নেন ৪ উইকেট। অবসরের পর তিনি নির্বাচক হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে কর্নাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তিনি।

কীর্তি আজাদ

সেমি ফাইনালে ইয়ান বোথামের উইকেট ম্যাচ ভারতের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। তার উইকেট নেন আজাদ। অবসরের পর তিনি রাজনীতিতে পা রাখেন। কংগ্রেসের টিকিটে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

সৈয়দ কিরমানি

উইকেটের পিছনে নির্ভরযোগ্য হাত ছিল কিরমানির। তার খেলা দলকে অনেক ম্যাচ জিততে সাহায্য করেছে। তিনি কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ সামলান। এছাড়া তিনি নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেন। বর্তমানে তিনি একজন পেশাদার গলফার।

বলবিন্দর সাঁধু

দলের এই নির্ভরযোগ্য মিডিয়াম পেসার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ফাইনালে দুই উইকেট নেন। তবে তার ক্যারিয়ার বেশি লম্বা হয়নি। তিনি বিভিন্ন রাজ্য দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।

যশপাল শর্মা

বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে সেরা হন যশপাল। করেন ৮৯ রান। সেমিফাইনালে তিনি করেন ৬১ রান। যা ছিল সেই ম্যাচের সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে তাকে ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। এর আগে তিনি পঞ্জাব ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক ছিলেন। এছাড়া দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচক ও সহকারী কোচ ছিলেন।

মদন লাল

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের পক্ষে মদন লাল নেন তিন উইকেট। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নেন চার উইকেট। ফিল্ডিংয়েও তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। অবসরের পর তিনি ভারত ও সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর কোচের পদ সামলান। ২০২০ সালে তিনি ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

সুনীল ভালসন

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের পক্ষে একটাও ম্যাচে সুযোগ পাননি সুনীল ভালসন। একবারই তিনি মাঠে পা রাখেন যখন ভেংসরকার চোট পেয়ে মাঠের বাইরে বেরিয়ে যান। ২০১৯ সালে তাকে ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটিতে সদস্য হিসেবে নির্বাচন করে BCCI। এছাড়া তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ দলের নির্বাচক ও ক্রিকেট উন্নয়ন কমিটির সদস্যও ছিলেন। সূত্র: এমএসএন

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
রাজনীতিলীড নিউজসর্বশেষ

এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে...

খেলাধুলাসর্বশেষ

ব্রাজিলকে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে আর্জেন্টিনা

একটি ক্লাসিক ম্যাচ, এক অবিশ্বাস্য স্কোরলাইন, আর আর্জেন্টিনার ফুটবলের নতুন প্রজন্মের দুর্দান্ত...

খেলাধুলাসর্বশেষ

শেষ ওভারে ছক্কায় রুদ্ধশ্বাস জয়, সেরা চারে খুলনা

শেষ ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৫ রান। হাতে ৬ উইকেট। ম্যাচটি হেসেখেলেই...

জাতীয়লীড নিউজসর্বশেষ

শেখ হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধির পুরোটাই ভুয়া: রয়টার্সকে ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত...