সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএ লায়েকের বিরুদ্ধে রাস্তা প্রশস্তকরণের নামে জোরপূর্বক হুমকি-ধমকি দিয়ে বাসার সীমানা প্রাচীর ভাঙার অভিযোগ করেছেন নগরীর কেওয়াপাড়ার এক বাসিন্দা। ২ ফেব্রুয়ারি সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর করা এই অভিযোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিষয়টি দেখার সুপারিশ করেছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, নগরীর কেওয়াপাড়ার পড়শী এলাকায় সিসিক কর্তৃপক্ষ কোনোধরনের নোটিশ না দিয়ে রাস্তা বর্ধিতকরণের নামে তার সহ আশপাশের কয়েকটি বাড়ীর সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙেও ফেলেছেন। অভিযোগকারীর বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও গেইট ভেঙে ফেলার জন্য প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছেন।
৩১ জানুয়ারি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সরজমিনের গিয়ে এই রাস্তা বর্ধিত করণের কোন বৈধতা পাননি উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, মেয়র চলে যাওয়ার পর কাউন্সিলর লায়েক তার লোকজন নিয়ে গিয়ে ফের হুমকি দিয়ে এসেছেন। এমতাবস্থায় তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের যে কোনো সময় প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন।
এছাড়া একই ঘটনায় ২২৭/পড়শীর বাসিন্দার পক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাডভোকেট মো. সেলিমুর রহমান সিসিক মেয়র ও কাউন্সিলর লায়েককে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশে তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত অমান্য করে দুই ফুটের জায়গায় তার মোয়াক্কেলের বাসার সীমানা প্রাচীর ভেঙে প্রায় তিন ফুট ড্রেন নির্মাণের অপচেষ্টা করছেন।
৫তলা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের বেইসমেন্টের ওপর দিয়ে ড্রেন নির্মাণ শুরু করেন। পরে স্থানীয়দের বাধার মুখে কাজ বন্ধ করে চলে যান। এভাবে ড্রেন নির্মাণ করলে আমার মোয়াক্কেলের ৫তলা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের বেইসমেন্টের ব্যাপক ক্ষতি হবে এবং পানীয় জলের ডিপ নলকূপ ড্রেনের আওতায় চলে যাবে।
নির্ভরশীল লোকের মাধ্যমে সরজমিন তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের জন্য সিসিক মেয়রকে অনুরোধ করেন। অন্যথায় তারা উপযুক্ত প্রতিকারের জন্য আদালতের আশ্রয় নিবেন।
সরজমিনে কেওয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৮ ফুট রাস্তা ১২ ফুটে প্রশস্তকরণের জন্য দুইপাশের বাড়িগুলোর সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে বাসাগুলোর আর সীমানা প্রাচীর দেয়ার জায়গা নেই। ২২৭ নং বাসার ৫তলা বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশনের বেইসমেন্টের নিচে চলে গেছে ড্রেন এবং পানীয় জলের ডিপ নলকূপ ড্রেনের আওতায় আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর কারো মদদে জোরপূর্বক তাদের ব্যাপক ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে তাদের বাধার মুখে কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সঠিকভাবে সমাধান না হলে তাদের বাসাবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এব্যাপারে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী শামছুল হক বলেন, এই রাস্তার জন্য কোনো টেন্ডার হয়নি। কাউন্সিলর স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে কাজ করা জন্য বলেছেন। আমরা কাজ করছিলাম। এখন মেয়র ও কাউন্সিলরের নির্দেশে কাজ বন্ধ রয়েছে।
সিসিকের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএ লায়েক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুরো ওয়ার্ডের রাস্তা প্রশস্তকরণসহ বিভিন্ন কাজের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমেই কাজ করা হচ্ছে। কাজের আগের এলাকাবাসীর সঙ্গে সভা করেছি। সভায় উপস্থিত সকলেই রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য দাবি করেছেন। তাদের দাবি অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কোনো বাহিনী নেই। এসব মিথ্যা কথা। কাউকে হুমকি-ধমকিও দেইনি। বর্তমানে মেয়র সার্ভেয়ার নিয়োগ করেছেন। সার্ভেয়ার তদন্ত করার পর যদি বেআইনি কিছু করে থাকি মেয়র ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অভিযোগের ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য আমার অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a comment