গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার মীরেরবাজার চৌরাস্তায় কর্মরত ট্রাফিক সার্জেন্ট এরশাদের বিরুদ্ধে সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
কাগজপত্রে ত্রুটি থাকা গাড়ির চালকদের সঙ্গে পর্যাপ্ত নগদ টাকা না থাকলে বিকাশে অন্যথায় দাবি করা টাকা বাকিতে ফিরে আসার সময় আদায় করা হয় এখানে।
স্থানীয়রা জানান, ফিটনেসবিহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ যান ও অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে ঢাকা-বাইপাস হাইওয়ে ও টঙ্গী ঘোড়াশাল হাইওয়ের মিলনস্থল মীরেরবাজার চৌরাস্তা এলাকায় ৭-৮ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে নিয়মিত যানজট লেগেই থাকে। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নাম করে নীরব চাঁদাবাজিতে মগ্ন থাকেন। ফলে যানজটের পাশাপাশি চালকরা প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় লালমনিরহাটগামী দাউদকান্দির মেঘনা এলাকা থেকে আসা টাইগার সিমেন্ট বহনকারী ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট-২০-৫৬১৪) চালক লাভলু মিয়া ট্রাফিক সার্জেন্ট এরশাদের চাঁদাবাজির শিকার হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী ট্রাক ড্রাইভার লাভলু মিয়া জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মীরেরবাজার চৌরাস্তা অতিক্রম করার সময় সার্জেন্ট এরশাদ সিগন্যাল দিয়ে থামিয়ে কাগজপত্র দেখাতে বলেন। এ সময় চালক ট্রাকমালিককে ফোন করলে সার্জেন্ট এরশাদ কাগজপত্র কয়েক মাসের মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় মামলা না দেওয়ার শর্তে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। ট্রাকমালিক লালমনিরহাটের ইসরাউল হক এ সময় জানান, চালকের সঙ্গে এত টাকা নেই।
চালক লাভলু মিয়া জানান, পরে আমার সঙ্গে থাকা নগদ ২২০০ টাকা ও বাকি টাকা ট্রিপ নিয়ে মীরেরবাজার হয়ে ফেরার সময় দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেন সার্জেন্ট । পাশাপাশি সার্জেন্ট এরশাদ স্যার আমাকে মাসিক চুক্তিবদ্ধ করে একটি ফোন নাম্বার দেন (০১৩০৮৩৬০৭২৭)। সার্জেন্ট বলেন, মাসে এক হাজার টাকা দিলে গাজীপুর সিটিতে কেউ ধরলে প্রদত্ত নাম্বারে ফোন দিলে তিনি ছাড়িয়ে দেবেন। কোনো মামলা হবে না। মাসিক চুক্তিবদ্ধ হলে নো প্রবলেম।
অন্যদিকে যোগাযোগ করলে ট্রাক মালিক লালমনিরহাটের আদিতমারী থানার ১নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইসরাইল হক জানান, করোনাকালে গাড়ির ব্যবসায় ধস নেমেছে, তাই শনিবার রাতে ড্রাইভারের মোবাইল ফোন দিয়ে ওই সার্জেন্ট জানান ১০ হাজার টাকার মামলা হবে কী করবেন? ২০০-৪০০ টাকা রেখে ছেড়ে দিতে বলেছিলাম, কিন্তু শোনেননি উনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি রাতের একই সময়ে ভৈরবগামী আলু বহন করা ট্রাক ড্রাইভার (ঢাকা মেট্রো ট-১৩-১৮৮১) মোমেন মিয়ার কাছ থেকে বিকাশে ছয় হাজার টাকা আদায় করেন ওই ট্রাফিক সার্জেন্ট এরশাদ। মোমেন মিয়া বগুড়া জেলার কাহালু থানার ধুপচাচিয়ার আঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মোমেন ড্রাইভার জানান, মীরেরবাজার চৌরাস্তায় ভয়াবহ যানজটে একটি ট্রাকের সঙ্গে একটু ধাক্কা লাগায় সার্জেন্ট এরশাদ মামলার ভয় দেখিয়ে ছয় হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। যেই টাকা মীরেরবাজার চৌরাস্তা মোড়ে একজনের বিকাশের দোকান থেকে ট্রাক মালিক নাসিম সাহেবের থেকে এনে দিই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীরেরবাজারে কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট এরশাদ বলেন, অফিসে আসেন কথা বলব। পরে সার্জেন্ট এরশাদের সহকারী রেকার অপারেটর খোকন ফোন করে এ প্রতিবেদককে দেখা করার অনুরোধ করে বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে মাসিক একটা টাকা চুক্তি করে দেব, দেখা করেন’।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সহকারী উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) পীযুষ কুমার জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a comment