ময়মনসিংহ

জানমাল বাঁচাতে বন্যহাতির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত গ্রামবাসী

Share
Share

‘কতোদিন থাইকা হাতি আসে। জান মালের ক্ষতি করতাছে। কই কি অইছে। হাতি মরলে আর মানুষ মরলে প্রশাসন আহে। দেইখা যায়। আমগোর কষ্ট কেউ দেহে না।’ কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের শ্রীবরদীর সীমান্তের গারো পাহাড়ে খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ব্রতিন মারাক।

তার প্রতিবেশী লবকোশ মারাক বলেন, ‘আমরা পাহাড়ে থাহি। হাতির সাথে যুদ্ধ করি। সরকার থাইক্যা আমগোর জন্যে কোনো ব্যবস্থা নেই।’

তাদের মতো গারো পাহাড়ের ২০-২২টি গ্রামের মানুষের এমন অভিযোগ। গ্রামবাসী জানায়, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের শ্রীবরদীর সীমান্তে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ করেছে ভারত। এতে উপজেলার ভূ-খন্ডে আটকা পড়েছে শতাধিক বন্য হাতি। এসব হাতি খাদ্যের সন্ধানে ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। এতে সীমান্তবাসীর জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত তারা জানমাল বাঁচাতে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। হাতির আক্রমনে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অন্য দিকে মানুষের নৃশংসতার বলি হচ্ছে হাতি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জহুরুল হক জানান, গারো পাহাড়ের প্রায় ১০ কিলোমিটার সীমান্তে ২০/২২টি গ্রাম। এখানে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। এলাকাটি কৃষি নির্ভরশীল। এসব এলাকাতে হাতি তাণ্ডব চালায়। এতে কৃষকরা বিপর্যন্ত হয়ে পড়ছে। তাই জানমাল বাঁচাতে একে অপরের সাথে লিপ্ত হয় যুদ্ধে।

একটি এনজিও সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সাল থেকে হাতির দল সীমান্ত এলাকায় আসে। গত ১৮ বছরে হাতির আক্রমণে অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারায়। আহত হয় শতাধিক। অন্যদিকে মানুষের নৃশংসতার বলি হয় ১০টি হাতি ও দুটি বাঘ।

ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, পাহাড়ের বাসিন্দারা অনেক সুবিধা বঞ্চিত। এর মধ্যে বন্যহাতির আক্রমণে ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারে না। এ জন্য অনেকেই মানবেতর জীবন কাটান। সম্প্রতি কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ হয়েছে। এতে লোকালয়ে হাতির উপদ্রব কমলেও বন বাগানের বৃক্ষের ক্ষতি করছে।

বালিজুরি রেঞ্চ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, হাতি বনের ক্ষতি করছে। যাতে মানুষের ক্ষতি না করে এ জন্য হাতিকে তাড়ানোর কোনো প্রকার অত্যাচার করতে দেই না। ফলে বাড়ি ঘরে হাতির তাণ্ডব অনেকটাই কমে গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার বলেন, হাতির হামলায় কেউ আহত বা নিহত হলে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ফসলের ক্ষতি হলে আমরা ক্ষতি পূরণ দিয়ে আসছি। হাতির অত্যাচার থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধান চান গ্রামবাসী।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
ময়মনসিংহ

মুদি দোকানির এক মাসের বিদ্যুৎ বিল ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা!

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে হেলাল উদ্দিন নামের এক মুদি দোকানির এক মাসে ৯ লাখ...

ময়মনসিংহ

রাস্তায় কাতরাচ্ছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ, অতপর…

রাস্তায় কাতরাচ্ছিলেন সত্তোরোর্ধ্ব অসুস্থ এক বৃদ্ধ। পথচারীরা তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন...

ময়মনসিংহ

নেত্রকোনায় শিলাবৃষ্টি, কৃষকের মাথায় হাত

ঝড়-বৃষ্টি মৌসুমের শুরুতেই নেত্রকোনায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বোরো, সবজি ফসল ছাড়াও...

ময়মনসিংহ

মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, শিক্ষক আটক

জামালপুরের মেলান্দহে এক মহিলা মাদ্রাসার এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছেন ওই মাদ্রাসার...