নারী ও শিশু

করোনার সাত মাসে ২১ জেলায় ১৪ হাজার বাল্যবিবাহ

Share
Share

২০২০ সালে করোনার সাত মাসে দেশের ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। ‘বাল্যবিয়ের অবস্থা দ্রুত বিশ্লেষণ: করোনাকাল ২০২০’ শীর্ষক এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক ওয়েবিনারের মাধ্যমে জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। জরিপটি পরিচালনা ও প্রতিবেদন তৈরি করেছে বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সহায়তায় ছিল জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল। ওয়েবিনারে সভাপ্রধান ছিলেন এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। জরিপের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন এমজেএফের কো–অর্ডিনেটর অর্পিতা দাশ ও সিনিয়র ম্যানেজার গিয়াসউদ্দীন আহমেদ।

ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, রাঙামাটি, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, জামালপুর, যশোর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে ২১ হাজার ২৫৮ জন অংশ নেয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী অবিবাহিত মেয়ে, ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়া মেয়ে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়ে আছে—এমন বাবা-মা, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, ইউএনও, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তা, নিকাহ নিবন্ধক, স্থানীয় নেতা, শিক্ষক, পুলিশ প্রমুখ।

জরিপের ফলাফল বলছে, ৭৮ শতাংশ বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা বাবা-মা। আর ৪ হাজার ৮৬৬টি বাল্যবিবাহ নিকাহ নিবন্ধক কর্তৃক নিবন্ধিত হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ তাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে অন্তত একটি বাল্যবিবাহের কথা জানিয়েছে।

করোনাকালে নিম্ন আয়ের মানুষ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল আয় হারানো, ক্ষুদ্র ব্যবসা ধ্বংস ইত্যাদি। এই চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে সমাজে বিদ্যমান নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিধিবিধান ও বিশ্বাস যুক্ত হয়ে করোনাকালে বাল্যবিবাহের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

করোনাকালে দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও পরিবারের সদস্যদের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা করতে না পারার বিষয়কে বাল্যবিবাহের বড় কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে ৩০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। করোনাকালে বাল্যবিবাহের অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—আয় হারিয়ে দারিদ্র্য বৃদ্ধি, বিদ্যমান সামাজিক নিয়ম-বিশ্বাস, স্কুল বন্ধ, বাল্যবিবাহের মাধ্যমে অভিভাবকদের কিছু সুবিধা পাওয়ার আশা, কম পরিমাণ যৌতুক দেওয়ার সম্ভাবনা।

আয়োজনে ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের উপ-প্রতিনিধি ইকো নারিতা বলেন, বাল্যবিবাহের একটা বড় কারণ দারিদ্র্য। বাল্যবিবাহ বন্ধে দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি মেয়েদের সুযোগগুলো বাড়তে হবে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করা জীবন রক্ষার সমান কাজ।

বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকারকে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি আহ্বান ইউনিসেফের উপপ্রতিনিধি ভিরা মেনডোনকা। বাল্যবিবাহ বন্ধের ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার ওপর জোর দেন তিনি।

জরিপ অনুযায়ী, ১০ দশমিক ৬ শতাংশ মেয়ে নিজেরাই নিজেদের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে চেয়েছে, তারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছে। সে ক্ষেত্রে তারা সাড়াও পেয়েছে।

৯৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছে, বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়া দরকার। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে জানাশোনা ও বাস্তবে তার চর্চার মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে বলে জরিপে দেখা গেছে।
জরিপ উপস্থাপনের এই আয়োজনে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া দুই কিশোরী তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে। তারা হলো কুড়িগ্রামের হালিমা আক্তার ও গাইবান্ধার সীমা আক্তার। বক্তারা এই দুই কিশোরীর সাহসিকতার প্রশংসা করেন।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
ক্যাম্পাসগণমাধ্যমনারী ও শিশুপ্রচ্ছদবিনোদনসর্বশেষ

সমালোচনার মুখে টিএসসিতে গিয়ে পোস্টার ছিঁড়লেন মেহজাবীন

সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে টিএসসিতে গিয়ে সোহাগী জাহান তনুর গ্রাফিতির ওপরে লাগানো...

ক্যাম্পাসনারী ও শিশুপ্রচ্ছদবিনোদনশিল্প-সাহিত্যসর্বশেষ

কমিটিতে পূজা চেরির নাম, মুখ খুললেন শিবির সভাপতি

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের প্যাডে চিত্রনায়িকা পূজা চেরির পদ পাওয়ার একটি ছবি...

নারী ও শিশুপ্রচ্ছদবিনোদনশিল্প-সাহিত্যশোক ও শুভেচ্ছাসর্বশেষ

চলে গেলেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার

একুশে পদকজয়ী রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার। আজ সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে...

ক্যাম্পাসনারী ও শিশুপ্রচ্ছদবিনোদনসর্বশেষ

শিবিরের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে যা বললেন পূজা চেরি

শিশুশিল্পী হয়ে শোবিজে ক্যারিয়ার শুরু করেন বর্তমান সময়ের নায়িকা পূজা চেরি। অভিনয়...