লীড নিউজ

সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোও পেলো মুজিববর্ষের ঘর

Share
Share

‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ ঘোষণার আলোকে এবার সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাড়ে তিন হাজার পরিবারের হাতে ঘর তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

রংপুরে তারাগঞ্জে পাটনি (মাধব) সম্প্রদায়, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল, দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার কয়লাখনির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, নীলফামারীর হরিজন সম্প্রদায় ও বরগুনার তালতলীর রাখাইনদের ঘর করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল এবং প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণও দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্বাহী সেলের অধীনে চলছে এ কর্মসূচি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর জন্যও এমন প্রকল্প রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, লাল টিনের তৈরি চালের ঘরগুলোতে আছে দুটি কক্ষ, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর। ঘর পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন গৃহহীন মানুষগুলো। পাটনি সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর আগে থেকে জমি ছিল। তাদের শুধু ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাঁওতালরা ঘরের সঙ্গে পেয়েছেন জমিও।

খুশির ঝিলিক বড়গোলায়

রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলায় কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর বড়গোলা গ্রামে বাস করেন পাটনি সম্প্রদায়ের কিছু পরিবার। সনাতন ধর্মাবলম্বী এসব মানুষের অনেকেই থাকতেন খুপড়ি ঘরে। বাঁশের কুলা, চালনি বানিয়ে কোনওমতে দিন কাটছিল তাদের। দু’বেলা খাবারই জোটে না, তাই নিজের একটা বাসযোগ্য বাড়ি থাকবে এমনটা ভাবতেও পারেনি তারা। এখন এখানে ২৫টি পরিবার পেয়েছে দুই ক্ক্ষবিশিষ্ট পাকা ঘর। প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য আছে একটি শৌচাগার।

এসব পরিবারের চোখেমুখে এখন খুশির ঝিলিক। এমনই এক দম্পত্তি মানিক চন্দ্র এবং আকু বালা। আগে তিন সন্তান নিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো ছোট্ট এক টিনের ঘরে থাকতেন। আকুবালা জানান, পাকা ও উচু ঘর পেয়ে তাদের সুবিধা হয়েছে। আগে বন্যায় পানি উঠতো। এখন আর উঠবে না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে আরামে থাকা যাবে।

কথা হয় আরেক পরিবারের সঙ্গে। দুলাল চন্দ্রের ছেলের স্ত্রী শিউলী চন্দ্র বলেন, ‘বউ হয়ে আসার পর শ্বশুরবাড়িতে থাকার ঘরের সমস্যা ছিল। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পাকা ঘরে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি উঠেছেন। আমি ও আমার স্বামী থাকছি পুরনো ঘরে।’

মরাবস্তা পুকুর এখন মনোরম

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের চাঙ্গুড়া গ্রামটি উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে। নিভৃত পল্লী এটি। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে খুপড়ি ঘরে বাস করে সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর কিছু পরিবার। গ্রামে আছে মরাবস্তা নামের একটি বড় আকারের পুকুর। পুকুরের চার পাড়ে ছোট খুপড়ি তুলে বাস করে আসছিল সাঁওতালরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে মরাবস্তা পুকুরের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ৫০টি পরিবারকে ঘর ও জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছে। এককালের জরাজীর্ণ তিন একরের পুকুরটি হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন ও মনোরম।

পুকুরপাড়ে ঘর পাওয়া বুনিতা সরেন প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যিনি আমাদের ঘর দিয়েছেন, তিনিও যেন অনেক সুখে থাকেন। সারাজীবন যেন এভাবেই মানুষের সেবা করে যেতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় দুই একর ৮৬ শতাংশ খাসজমিতে ৫০টি সাঁওতাল পরিবার সেমিপাকা ঘর পেয়েছে। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি করে শয়নকক্ষ, রান্নাঘর ও টয়লেট। আছে বারান্দাও। প্রতিটি পরিবার পেয়েছে দুই শতাংশ করে জমির মালিকানা। এতদিন অবহেলায় পড়ে থাকা সাঁওতালপল্লীতে পৌঁছেছে বিদ্যুত ও টিউবওয়েলের পানি।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
রাজনীতিলীড নিউজসর্বশেষ

এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এক-এগারোর ভয় দেখিয়ে...

জাতীয়লীড নিউজসর্বশেষ

শেখ হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধির পুরোটাই ভুয়া: রয়টার্সকে ড. ইউনূস

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত...

জাতীয়লীড নিউজসর্বশেষ

১৬ বছর পর কারামুক্ত বিডিআরের ১৬৮ সদস্য

দীর্ঘ ১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া...

জাতীয়লীড নিউজসর্বশেষ

জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে...