আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে এলোপাতাড়ি গুলি, আরও ৭ বিক্ষোভকারী নিহত

Share
Share

মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে আরও সাত বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। নৃশংস ধরপাকড় সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার দেশটির বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর দিয়েছে।

এমন এক সময় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যখন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে রণক্ষেত্রের অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল।

নিহতদের মধ্যে একজন ইয়াঙ্গুনের নর্থ ডাগন জেলার, বাকি ছয়জন সেন্ট্রাল টাউনের।

হাসপাতালে মরদেহ নিয়ে যেতে সহায়তা করা ৩১ বছর বয়সী এক যুবক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছিলাম। বিশ্বাসই করতে পারছি না যে তারা এমনটা করতে পারে।

দেশটির অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারর্স অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বলছে, বৃহস্পতিবারের এই হত্যাকাণ্ড ছাড়াও এর আগে আরও ৬০ জন নিহত হয়েছেন। পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত আটক হয়েছেন দুই হাজারের বেশি।

এর আগে বিক্ষোভকারীদের ওপর জান্তা সরকারের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এ সময় সেনাবাহিনীকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কিন্তু চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার মুখে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণকে অভ্যুত্থান হিসেবে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।

গত পহেলা ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলে নেয় সেনাবাহিনী। এ সময়ে দেশটির কার্যত নেতা স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকেও আটক করা হয়।

পরবর্তীতে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড়ে ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে দুই হাজারের বেশি।

নারী-শিশুসহ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জোরালো নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, আমরা সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বনের আহ্বান জানাচ্ছি। পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এখানে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর কথা থাকলেও চীন, রাশিয়া, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি।

এদিকে মিয়ানমারে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘রণক্ষেত্রের অস্ত্র’ ব্যবহার করছে দেশটির জান্তা সরকার। তাদের কমান্ডিং অফিসারদের মাধ্যমে সেখানে হত্যার মহোৎসব চালানো হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এমন দাবি করেছেন।

‘দেশজুড়ে হত্যার মহোৎসব’ নামে অপরাধের প্রমাণ হিসেবে সামাজিকমাধ্যমে গ্রাফিক ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করেছে এই মানবাধিকার সংস্থাটি।

অ্যামনেস্টির সংকটকালীন পদক্ষেপের পরিচালক জোয়ান্নি ম্যারিনার বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই কৌশল কোনোভাবেই নতুন নয়। কিন্তু তাদের হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ সামাজিকমাধ্যমে এর আগে কখনো দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, এগুলোই সর্বাত্মক সিদ্ধান্ত না, একেবারে নজিরবিহীন। কমান্ডাররা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের বাহিনী ও খুনে পদ্ধতিকে প্রকাশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরের ৫৫টি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে অ্যামনেস্টি।

দাওয়াই শহরের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক সেনা নিজের রাইফেলটি তার পাশের পুলিশ কর্মকর্তাকে দিচ্ছে। পুলিশ রাইফেলটি নিয়ে গুলি করে। রাস্তার পাশের একটি ভবন থেকে ভিডিও রেকর্ড করা হয়। অডিওতে এক নারীকে ফোঁপাতে শোনা গেছে।

এ সময় আশপাশে উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদযাপন করতে দেখা গেছে। ম্যারিনার বলেন, এই ঘটনা বলে দিচ্ছে, তারা কেবল বেপরোয়াভাবে মানুষের জীবনকে অগ্রাহ্যই করছে না, বিক্ষোভকারীদের দিকে গুলি করে উল্লাস প্রকাশ করছে।

তিনি বলেন, এই হত্যার মৎসবে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো মধ্যে সমন্বয় রয়েছে।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles
আন্তর্জাতিকসর্বশেষ

শব্দের চেয়ে ৪ গুণ গতির ড্রোন বানাচ্ছে চীন

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স কিছু দিন আগে পরবর্তী...

আন্তর্জাতিকসর্বশেষ

ভারতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা

ভারতে কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু শহরের কালকেরে হ্রদের কাছে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি...

আন্তর্জাতিকসর্বশেষ

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চীনের বিরুদ্ধে নতুন হুমকি নিয়ে হোয়াইট হাউসে ফিরে এসেছেন।...

আন্তর্জাতিকসর্বশেষ

দায়িত্ব নিয়েই সেনা মোতায়েন শুরু করেছেন ট্রাম্প

অভিবাসন নিয়ে কঠোরতার ঘোষণা দিয়েছেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই অংশ হিসেবে...